অর্থনীতি ও বাণিজ্য ডেস্ক:
এশিয়ার বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলে আকর্ষণীয় মূল্যছাড় দিয়েছিল সৌদি আরব। তবে মার্চে সরবরাহের জন্য দেশটির তেলের দাম বেড়েছে নাটকীয়ভাবে। চীনে পণ্যটির চাহিদা পুনরুজ্জীবিত হওয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে এমন মূল্যবৃদ্ধি। চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশ। নভেল কারোনাভাইরাসসংক্রান্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ শিথিল করায় দেশটির অর্থনীতিতে দ্রুত প্রসার ঘটছে। শিল্পোৎপাদন যেমন বাড়ছে, তেমনি স্বাভাবিক হচ্ছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক যাতায়াত। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সুযোগে দেশটির জ্বালানি তেল পরিশোধন খাত প্রক্রিয়াকরণের হার ব্যাপক মাত্রায় বাড়িয়েছে। ফলে খুব সহজেই অনুমান করা যায়, আগামী মাসগুলোয় চীন অনেক বেশি পরিমাণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করতে যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো দেশটি কি সৌদি আরব থেকে বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনবে নাকি এর চেয়ে সাশ্রয়ী কোনো বিকল্প উৎসের সন্ধান করবে। আরামকো সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল উত্তোলন কোম্পানি। আগামী মাসে এশিয়ার বাজারে সরবরাহের জন্য কোম্পানিটি নিজেদের জ্বালানি তেল আরব লাইট ব্লেন্ডের অফিশিয়াল দাম বাড়িয়েছে। সৌদি যে পরিমাণ জ্বালানি তেল রফতানি করে তার দুই-তৃতীয়াংশই যায় এশিয়ার দেশগুলোয়। কিন্তু দাম বাড়ায় শুধু চীনেই নয়, এশিয়ার অন্যান্য দেশেও আরব লাইট ক্রুড আকর্ষণ হারাতে পারে। বিকল্প হিসেবে চীন অ্যাঙ্গোলা ও নাইজেরিয়াসহ পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল থেকে জ্বালানি তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি সরবরাহ আসতে পারে রাশিয়া থেকে।
চীন এরই মধ্যে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার পরিমাণ লক্ষণীয় মাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সৌদি আরবকে হটিয়ে চীনের শীর্ষ জ্বালানি তেল সরবরাহকারী দেশ হয়ে উঠেছে রাশিয়া। এর মূল কারণ রাশিয়া চীনের প্রচলিত বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল বিক্রি করছে।
ইউক্রেনে হামলার প্রতিক্রিয়ায় গত বছরের শুরুর দিকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা দেশগুলো একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়ার ওপর। সবশেষ দেশটির পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি বন্ধ করে দেয় ইইউ। এছাড়া এসব পণ্যের ওপর প্রাইস ক্যাপ (সর্বোচ্চ মূল্যসীমা) আরোপ করে জি৭, ইইউ, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। ৫ ফেব্রুয়ারি এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর দেশটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও প্রাইস ক্যাপ দেয়া হয়েছিল। পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের মিত্র দেশগুলোয় বাজার হারানোর কারণে রাশিয়া এশিয়ায় জ্বালানি তেল বিক্রি বাড়িয়েছে। এর মধ্যে ভারত ও চীন দেশটির পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভের দেয়া তথ্যমতে, জানুয়ারিতে চীন রাশিয়া থেকে দৈনিক ২০ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল করে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে। ডিসেম্বর আমদানির পরিমাণ ছিল দৈনিক ১৫ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল। এ মাসেও চীনের শীর্ষ সরবরাহকারী ছিল রাশিয়া। এ সময় সৌদি আরব থেকে আমদানি করা হয়েছে দৈনিক ১৭ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল। বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী মাসগুলোয় ব্যাপক হারে চাহিদা বাড়লে সৌদি আরবের পরিবর্তে রাশিয়াকেই প্রাধান্য দেবে চীন। একই কথা প্রযোজ্য ভারতের পরিশোধন প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রেও। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের গ্রেডের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। এতে দেশটি থেকেও চীনের আমদানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।