Date: May 18, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / রাজধানী / বেড়েছে রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী ডেঙ্গু মশার উপদ্রব

বেড়েছে রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী ডেঙ্গু মশার উপদ্রব

July 15, 2023 12:20:40 PM   নিজস্ব প্রতিবেদক
বেড়েছে রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী ডেঙ্গু মশার উপদ্রব

রাজধানী প্রতিনিধি:
রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান-বনানীর বাসিন্দাদেরও ছাড় দিচ্ছে না মশা। এসব এলাকার বাসা, বাড়ি, নির্মাণাধীন ভবনেও নিয়মিত এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। বেড়েছে মশার উপদ্রবও।

শনিবার (১৫ ‍জুলাই) গুলশান-বনানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকার লেকপাড়ের বিভিন্ন জায়গায় পরিত্যক্ত পাত্রসহ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখা গেছে, যা এডিসের প্রজনন উপযোগী পরিবেশ। এসবের কারণে এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি বলে অভিযোগ করেছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালির দুর্ভোগ আর বছরজুড়ে যানজটের ভোগান্তি যেন নিত্যদিনের সঙ্গী রাজধানীবাসীর। এসব ভোগান্তির সঙ্গে এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক আর মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ মানুষ। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নানা উদ্যোগ, অভিযানসহ নিত্যনতুন পদক্ষেপও হার মানছে মশার কাছে, ডেঙ্গুর কাছে। বছরজুড়ে মশক নিধন কর্মসূচি, অর্থব্যয়, নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেও ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারেনি ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৫৫টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে মোট ১২৯টি ওয়ার্ড রয়েছে, যার মধ্যে ৯৮টি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কীটতত্ত্ব দল জরিপ চালিয়েছে। গত ১৭ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত প্রাক-বর্ষা এডিস জরিপে ঢাকার দুই সিটির ৯৮টি ওয়ার্ডে তিন হাজার ১৪৯টি বাড়িতে জরিপ পরিচালিত হয়। সেখানে ৫৫টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে থাকার তথ্য উঠে আসে।

যে কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এবার ডেঙ্গু ভয়ানক রূপ নিতে পারে। দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহ পরিস্থিতি ছিল ২০১৯ সালে। সেবার ঢাকার দুই সিটিতে ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ছিল ২১টি। এবার ঢাকার দুই সিটিতে ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকির ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৫টি। সেই বিবেচনায় এবার ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব ও সম্ভাব্য প্রজননস্থলের সংখ্যা সর্বোচ্চ।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে চালানো জরিপে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের বাহক মশার প্রজননস্থল শনাক্ত, পূর্ণাঙ্গ মশা ও লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপ ও ম্যাপিং করা হয়েছে। জরিপের তথ্যে দেখা গেছে, এসময় ঢাকার ২ হাজার ৫১১ বাড়ির মধ্যে ৪৫৩ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। আর ২ হাজার ৭৩৮টি পাত্রের মধ্যে ৬২৫টিতে পাওয়া গেছে এই লার্ভা।

এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৯৬২টি বাড়ির মধ্যে ২১০টি বাড়ি ও ৯৯৪টি পাত্রের মধ্যে ২৭৭টি পাত্র এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১ হাজার ৫৪৯টি বাড়ির মধ্যে ২৪৩টি বাড়ি ও ১ হাজার ৭৪৪টি পাত্রের মধ্যে ৩৪৮টি পাত্রে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা।

এদিকে গুলশান-বনানীর ১৫টি বাড়ির মধ্যে চারটিতে এডিস মশার লার্ভা খুঁজে পান জরিপকারীরা। যে কারণে বলা হচ্ছে, গুলশান-বনানীর অবস্থাও এবার ভালো নয়। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতিতে অন্য এলাকার মতো ঝুঁকিতে আছে এসব অভিজাত এলাকাও।

রাজধানীর গুলশান-২ এর লেকপাড়ের একটি বাড়ির মালিক লিয়াকত আলী বলেন, গুলশান অভিজাত এলাকা হলেও এখানে মশার উপদ্রব ভয়াবহ। দিন নেই, রাত নেই সব সময় মশার উপদ্রব। এখন তো পুরো ঢাকা শহরেই ডেঙ্গু আতঙ্ক। আমরাও এই আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করছি। বিশেষ করে লেকপাড়ের পাশে পরিত্যক্ত পাত্র, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, লেকের পানিতে আটকে থাকা আবর্জনা মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত। এ কারণে গুলশানের এদিকটাতে মশার উপদ্রব অনেক বেশি।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের গুলশান এলাকার মশক নিধন কর্মীদের সমন্বয়কারী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের মশক নিধন কর্মীরা নিয়মিত সব এলাকায় তাদের কাজ করে যাচ্ছে। মশার ওষুধ ছিটানোসহ অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ পাওয়া গেলে সেখানে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ডেঙ্গুর সিজনে মাসব্যাপী মশক নিধন কর্মসূচি চলছে, যার মাধ্যমে প্রতিটি এলাকায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া কোনো এলাকায় এডিসের লার্ভা বেশি পাওয়া গেলে আমরা সেখানেও বিশেষভাবে নজর দিয়ে ওষুধ ছিটাচ্ছি।

জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মাসব্যাপী বিশেষ মশক নিধন কর্মসূচি পরিচালনা করছি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে নিয়মিত লার্ভিসাইডিং করার পাশাপাশি নানা পদক্ষেপ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে ডিএনসিসির সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে আমাদের কাজের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। সবাই মিলে চেষ্টা করলে, সচেতন থাকলে তবেই কেবল ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।