Date: March 28, 2024

দৈনিক বজ্রশক্তি

Header
collapse
...
Home / অর্থনীতি / শঙ্কা কাটিয়ে দেশে এবার আমনের আশানুরূপ ফলন

শঙ্কা কাটিয়ে দেশে এবার আমনের আশানুরূপ ফলন

December 12, 2022 09:38:00 PM   স্টাফ রিপোর্টার
শঙ্কা কাটিয়ে দেশে এবার আমনের আশানুরূপ ফলন

ষ্টাফ রিপোর্টার: 

শঙ্কা কাটিয়ে দেশে এবার আমনের আশানুরূপ ফলন হয়েছে। যদিও এবার মৌসুমের শুরুতেই আমনের আবাদ অনাবৃষ্টির কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংও বড় ধরনের আশঙ্কা তৈরি করেছিল। কিন্তু ওসব শঙ্কা কাটিয়ে এবারের আমন মৌসুমের ফলন আশানুরূপ হয়েছে।

 ইতোমধ্যে দেশের প্রায় সাড়ে ৬৩ শতাংশ জমির আমন ধান কাটা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও আলো বেশি থাকায় এবার হেক্টরপ্রতি ৩ দশমিক ১০ টন চালের গড় ফলন পাওয়া গেছে।  যা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে এবার আমন মৌসুমে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ৪৪৭ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। তা থেকে ১ কোটি ৫৯ লাখ ৮৬ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে মোট ৩১ জেলার ৮০ হাজার ৭৭৭ হেক্টর ধান আবাদি জমি আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় ৫ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ধান। তাছাড়া অনাবৃষ্টির কারণেও সব জায়গায় একই সময়ে আবাদ শুরু করা যায়নি। সব মিলে এবার আমন উৎপাদন কমে যাওয়ার বড় শঙ্কা তৈরি হলেও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ফলনে আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমন মৌসুমে হেক্টরপ্রতি ফলনের হার ছিল প্রায় ২ দশমিক ৬২ টন। তার আগে ২০১৮-১৯ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত ফলন মোটামুটি আড়াই টনের ঘরেই ছিল।
সূত্র জানায়, স্বাধীনতার পর আমনের এত ভালো ফলন আর কখনো পাওয়া যায়নি। মূলত উচ্চফলনশীল জাতের আবাদ বেশি হওয়া, অনুকূল আবহাওয়া ও আলোকোজ্জ্বল পরিবেশ পাওয়া, রোগ-বালাই কম হওয়া এবং সারের সুষম প্রয়োগের কারণেই এবার ভালো ফলন হয়েছে। ব্রি ৫১, ব্রি ৪৮, ব্রি ৭৫, ব্রি ৯০, বিনা ১৬, বিনা ১৭ ও বিনা ২২ জাতের ধানই বেশি চাষাবাদ হয়েছে। এবার অতিবৃষ্টি না হওয়ায় ফলন বাড়াতে সহযোগিতা করেছে। ফলে গত বছরের চেয়ে হেক্টরপ্রতি দশমিক ৫ টন বেশি ফলন হয়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত চলতি রোপা আমন মৌসুমে ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার ৫৮ হেক্টর জমির ফসল কাটা হয়েছে। যা মোট জমির প্রায় ৬৩ দশমিক ৪২ শতাংশ। ওসব জমিতে ১ কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার ৯৮০ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। হেক্টরপ্রতি ফলনের হার ৩ দশমিক ১০ টন। তাছাড়া ধানের হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৬৫ টন ফলন পাওয়া গেছে। আর রোপা ও বোনা আমন মিলে ৩ টনের কিছু বেশি হেক্টরপ্রতি চালের গড় ফলন হয়েছে। এবার রাজশাহী, দিনাজপুর ও যশোর অঞ্চলের জেলাগুলোয় আমনের সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। রাজশাহী অঞ্চলের রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪ লাখ ৪ হাজার ৮৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়। ওই অঞ্চলটিতে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ১০ হাজার ৫৯৭ হেক্টর বা ৭৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। ওসব জমিতে চাল উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৭৮ হাজার ৩৩৩ টন। ফলনের হার হেক্টরপ্রতি ৩ দশমিক ৮৭ টন। তবে বিগত বছরগুলোয় প্রতি বিঘায় আমন আবাদে ৭-৮ হাজার টাকা খরচ হলেও এবার ডিজেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধিতে বিঘাপ্রতি প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। 
এদিকে কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টির কারণে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তারপর ডিজেল ও সারের মূল্যবৃদ্ধি কৃষকদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে শেষের দিকে আবহাওয়া ভালো থাকায় প্রত্যাশিত ফলন হয়েছে। তবে এবার আমনের ফলনের হার বেশি থাকলেও সাধারণত সুগন্ধিযুক্ত চাল বা চিকন চাল মৌসুমের শেষের দিকে কাটা হয়। সেগুলোর ফলন কম হয়। যে কারণে গড় ফলনের হার সামনে আরো কমতে পারে। এতোদিনে যে পরিমাণ ফসল কাটা হয়েছে তা মূলত উত্তরবঙ্গকেন্দ্রিক। ওসব অঞ্চলে উচ্চফলনশীল জাতের আবাদ করা হয়। ওসব এলাকায় বরাবরই ফলনের হার ভালো থাকে। মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি থাকলেও কৃষক সাধারণত আমন ধান হাতছাড়া করে না। তবে এবার কৃষকরা দেরিতে আমন রোপণ করেছে। ফলে শেষের দিকে ফলনের হার অনেকটা কমে যাবে। গড় ফলন ওই কারণে আরো কমে যাবে। প্রতি বছর উত্তরবঙ্গে বন্যায় অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এবার হয়নি। ফলে এবার আমনের সার্বিক ফলন ভালো হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম জানান, এবার আমনের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। এ বছরের মতো এর আগে কোনো বছর ভালো ফলন পাওয়া যায়নি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এবার ভালো ফলন হবে।